অস্থিভঙ্গ হচ্ছে এমন এক চিকিৎসাগত অবস্থা যেখানে রোগী অভিন্ন হাড়ের কোথাও ভেঙ্গে যাওয়াজনিত অসুস্থতায় ভোগে। প্রচন্ড শক্তি, চাপ কিংবা বিভিন্ন অসুখে (অস্টিওপোরোসিস, অস্থিক্যান্সার ইত্যাদি) ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ায় অস্থিভঙ্গ অবস্থার সৃষ্টি হয়। আহভঙ্গ প্রধানত তিন ধরনের সাধারণ, যৌগিক ও জটিল। নিচে এদের বিবরণ দেওয়া হলো।
সাধারণ হাড়ভাঙ্গা (Simple Fracture )
যে ধরনের অস্থিভঙ্গে ভঙ্গ অস্থি চামড়া বিদীর্ণ করে বের হয় না তাকে সাধারণ অস্থিভঙ্গ বলে। এ ধরনের অস্থিভঙ্গে এ হাড় শুধু দুই টুকরা হয়ে যায়, এর বেশি কিছু নয়। হাড় ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসে না বলে এ ধরনের অস্থিভঙ্গের আরেক নাম বন্ধ অস্থিভঙ্গ (closed fracture)
প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid):
অস্থিভঙ্গের মাত্রা ও সঠিক স্থান চিহ্নিত করতে হবে। আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির নড়াচড়া বন্ধ রাখতে হবে। সমস্ত ক্ষত পরিষ্কার করতে হবে। রক্ত সঞ্চালনে বাধা হতে পারে এমন টাইট জামা-কাপড়, গয়না-গাটি সরিয়ে ফেলতে হবে তা না। হলে ভাঙ্গা হাঁড়ে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ভাঙ্গা হাড় যথাস্থানে বসানোর জন্য তার সঙ্গে কাঠের খন্ড বা বাঁশের চটি বেঁধে দিতে হবে। রক্ত প্রবাহ ও সঞ্চালন পুনর্বার পরীক্ষা করতে হবে। ভাঙ্গা হাড়ের জায়গাটি যেন ফুলে না উঠে সে জন্য আঘাত পাওয়া জায়গা ৬-১০ ইঞ্চি উচুতে রাখতে হবে। অস্থিভঙ্গের জায়গায় বরফ দেওয়া যেতে পারে তবে দেখতে হবে জায়গাটি যেন ঠান্ডায় অসাঢ় না হয়ে যায়। হঠাৎ ও মারাত্মক আঘাত পেয়েছে আহত ব্যক্তি যেন এমনটি মনে না করে সে জন্য তাকে চাঙ্গা রাখতে হবে। এবং মাথা, ঘাড় ও শরীরের বিভিন্ন অংশ সাবধানে নড়াচড়া করতে হবে। আঘাতপ্রাপ্তির স্থল থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। পরবর্তী ধাপ হচ্ছে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক প্লাস্টার লাগিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা ও চিকিৎসাপত্র দেবেন। দেখা গেছে, সাধারণ অস্থিভঙ্গ ৮ সপ্তাহের মধ্যে সেড়ে যায়।
যৌগিক হাড়ভাঙ্গা (Compound Fracture)
যৌগিক হাড়ভাঙ্গা উনন্মুক্ত হাড়ভাঙ্গা নামেও পরিচিত। সাধারণত খেলাধূলার সময় কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় এ ধরনের হাড়ভাঙ্গা ঘটে, তখন হাড়ের টুকরা চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসে। এটি বেশ জটিল হাড়ভাঙ্গা কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ রক্তপাত হয় এবং দ্রুত সংক্রমণ ঘটে । যৌগিক হাড়ভাঙ্গার ক্ষেত্রেও সাধারণ হাড়ভাঙ্গার মতো প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে, তবে তা ক্ষণকালীন। কারণ যৌগিক হাড়ভাঙ্গা এত গুরুতর যা অস্ত্রোপচার ছাড়া বিকল্প চিকিৎসা নেই।
যৌগিক হাড়ভাঙ্গার প্রকারভেদহাড়ভাঙ্গার প্রকৃতির ভিত্তিতে যৌগিক হাড়ভাঙ্গাকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।
ধরন ১ : ক্ষতের পরিমাণ কম, চামড়ায় ১ সে.মি. এর বেশি ক্ষত দেখা যায় না এবং রক্তপাতও হয় কম।
ধরন ২ : ক্ষতের পরিমাণ বেশি, চামড়ায় ১ সে.মি.-এর বেশি ক্ষত, টিস্যুর ক্ষতি দেখা যায় না এবং চ তেমন ক্ষতি হয় না। র। অস্থিসন্ধিতে তা
ধরন ৩: এক্ষেত্রে চামড়া, টিস্যু ও হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়। রক্তপাত, সংক্রমণ এড়াতে দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়।
(হাড় ভেঙ্গে টিস্যু ও চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসা, প্রচুর রক্তপাত ও যন্ত্রণাময় ক্ষত সৃষ্টি হওয়া যৌগিক হাড়ভাঙ্গার লক্ষণ।)
জটিল হাড়ভাঙ্গা (Complex Fracture)
জটিল হাড়ভাঙ্গার ফলে বেশ কয়েকটি হাড়, অস্থিসন্ধি, টেন্ডন ও লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যৌগিক হাড়ভাঙ্গার মতো এক্ষেত্রে হাড়ের টুকরা চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে থাকে। জটিল হাড়ভাঙ্গাকে নানা ধরনে ভাগ করা যায়, এর মধ্যে প্রধান দুটি হচ্ছেঃ
১. বহু-টুকরাবিশিষ্ট (Multifragmentary fracture) : এক্ষেত্রে হাড় অনেকগুলো ছোট টুকরায় পরিণত হয়।
২. কয়েক-টুকরাবিশিষ্ট (Comminuted fracture) : এ ধরনের জটিল হাড়ভাঙ্গায় হাড়ের টুকরাগুলো আগের ধরনের চেয়ে সামান্য বড় এবং সংখ্যায় কম থাকে।
জটিল হাড়ভাঙ্গার লক্ষণাদি দেখে চিকিৎসক দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নেবেন, তবে তার আগে এক্স-রে রিপোর্ট দেখে নিতে হয়। এ ধরনের হাড়ভাঙ্গা থেকে রক্ষা পেতে হলে সড়ক পথে সাবধানে চলাচল, উঁচু স্থান থেকে সাবধানে লাফ দেওয়া, বয়স্কদের হাড় ভঙ্গুর হওয়ায় তাঁদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
Read more